নিজস্ব প্রতিনিধি— দীর্ঘ ৭২ বছর পর পাক ভূখণ্ডের বুকে পুনরায় খুলতে চলেছে হিন্দু দেবদেবীদের মন্দির। প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নেওয়ার পরেই দেশের সংখ্যালঘুদের ধর্মাচরণের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এর পর পাকিস্তানের মাটিতৈ বন্ধ হয়ে যাওয়া ৪০০টি পুরনো হিন্দু মন্দিরের সংস্কার এবং নতুন করে খোলার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তারই ফলপ্রসু হিসেবে দীর্ঘ ৭২ বছর পর পাকিস্তানের সিয়ালকোটে হাজার বছরের পুরানো প্রাচীন শেরওয়ালা তেজা সিং মন্দির খুলতে চলেছে পাক সরকার।
পাক পাঞ্জাবের শিয়ালকোট জেলার ডেপুটি কমিশনার বিলাল হায়দার এদিন বলেন, ‘এ বার থেকে হিন্দু দর্শনার্থীদের জন্য সর্বক্ষণ খোলা থাকবে এই মন্দির।’ পাকিস্তানের ৭২ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম হিন্দুদের মন্দির নতুন করে খোলা হচ্ছে। বিগত সাত দশকে ওই ইসলাম রাষ্ট্রে বহু মন্দির বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কোনওটি ‘গণরোষে’র শিকার হয়ে, কোনওটি জবরদখলের কারণে, কোনওটি বা সরকারি উন্নয়নমূলক কাজের ‘সৌজন্যে’! মন্দির দখল করে মাদ্রাসা, অনাথালয় এমনকী, কসাইখানা স্থাপনের নজিরও রয়েছে সে দেশে! এই পরিস্থিতিতে ‘ঐতিহ্যবাহী’ হিন্দু মন্দিরগুলি মেরামত করে নতুন করে চালু করার সিদ্ধান্তে ইমরান সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে নিশ্চিতভাবেই।
উল্লেখ্য, সর্দার তেজা সিং নির্মাণ করেছিলেন ‘শাওয়ালা তেজা সিং’ নামের এই মন্দির। তবে দেশভাগের সময়েই বন্ধ হয়ে যায় মন্দিরটি। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভাঙার ঘটনায় যখন গোটা দেশ উত্তাল হয়েছিল। সেই প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়েছিল সিয়ালকোটের এই মন্দিরেও। একদল উন্মত্ত জনতা ভাঙচুর চালিয়েছিলেন এই মন্দিরে। তারপর থেকে হিন্দুরা এই মন্দিরের ত্রিসীমানায় আসা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের এক হাজার বছরের পুরনো এই ‘শাওয়ালা তেজা সিং’ মন্দির ছিল আদতে শিবের মন্দির। দেশভাগের পর থেকেই বারবার ভাঙচুর-লুঠপাট চলে এই মন্দিরে। ১৯৯২ সালের ঘটনার আগে মন্দির বন্ধ থাকলেও অন্তত দর্শনীয় স্থান হিসেবে আনাগোনা ছিল দর্শকের। তবে ১৯৯২ সাল থেকে মানবজাতির পা একেবারেই পড়েনি এই মন্দিরে।
শিয়ালকোটের তেজা সিং মন্দিরের পাশাপাশি প্রথম দফায় খাইবার-পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারের গোরক্ষনাথ মন্দিরটিও নতুন করে খোলা হতে চলেছে। সেটি হেরিটেজ সাইট হিসেবে ঘোষণারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইমরান সরকার। পাক হিন্দু সংগঠনগুলির তরফে সরকারের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে।