নিজস্ব প্রতিনিধি— মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন মানস ভুঁইয়া। বিজেপি’র প্রার্থী দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বাম প্রার্থী হয়েছেন বিপ্লব ভট্ট। কংগ্রেসের শম্ভুনাথ চ্যাটার্জি। মানসবাবু বর্তমানে রাজ্যসভার সাংসদ। দিলীপবাবু খড়্গপুরের বিধায়ক। নিঃসন্দেহে তৃণমূল এবং বিজেপি’র দুই প্রার্থী হেভিওয়েট। মানসবাবু ইতিমধ্যে রাজ্য রাজনীতিতে নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন। আর এদিকে, রাজনীতির আঙিনায় প্রবেশ করেও চমকে দিয়েছেন দিলীপ ঘোষও। কারণ, খড়্গপুরের প্রয়াত কংগ্রেস বিধায়ক জ্ঞান সিং সোহন পালকে ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে তিনি পরাস্ত করে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় ঢোকার ছাড়পত্র অর্জন করেছেন। স্বাভাবিকভাবে সেই দিলীপ ঘোষ এখন মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রে বিজেপি প্রার্থী।
এবারে একনজরে দেখে নেওয়া যাক মেদিনীপুর লোকসভার চিত্র
মেদিনীপুর লোকসভার মধ্যে রয়েছে সাতটি বিধানসভা।
১। মেদিনীপুর
২। খড়্গপুর সদর
৩। খড়্গপুর গ্রামীণ
৪। নারায়ণগড়
৫। কেশিয়াড়ি
৬। দাঁতন
৭। এগরা
এই সাতটি বিধানসভার ৬টিতেই ২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে তৃণমূল। একমাত্র খড়্গপুর শহর বিধানসভা বিজেপি’র দখলে।
পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেশিয়াড়ি বিধানসভায় তৃণমূলের ফল আশানুরূপ হয়নি। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েত সমিতিতে বিজেপি’র দাপট অনেক বেড়েছে। কেশিয়াড়ি কাঁটা রীতিমত ভাবাচ্ছে তৃণমূলকে। খড়্গপুর শহর বিধানসভার খড়্গপুর পুর এলাকায় মোট ৩৫টি ওয়ার্ড রয়েছে। পুরসভা নির্বাচনের পর দেখা যায়, কংগ্রেস ১১টি, তৃণমূল ১১টি, বিজেপি ৭টি, সিপিএম ৩টি এবং সিপিআই ৩টিতে জয়ী হয়। সেই সময় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পুলিশসুপার ছিলেন ভারতী ঘোষ। মূলত তাঁর উদ্যোগেই বিজেপি’র সাতজন কাউন্সিলের মধ্যে পাঁচজন কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগদান করেন। এরপর বামেদের থেকেও বেশ কয়েকজন কাউন্সিলর তৃণমূলে আসে। বড়সড় ভাঙন ধরে কংগ্রেসেও। কংগ্রেসের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবি শঙ্কর পাণ্ডে বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরকে নিয়ে তৃণমূলে যোগদান করেন। বর্তমানে তৃণমূলে ২৬ জন কাউন্সিলর, বিজেপি’র ২, কংগ্রেসের ৬ এবং বামেদের ১ জন কাউন্সিলর রয়েছেন।
২০১৬ বিধানসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষ ৬৩০৯ ভোটে জয়ী হয়ে চমক দেন। দিলীপ ঘোষ পেয়েছিলেন ৬১,৪৪৬, কংগ্রেসের জ্ঞান সিং সোহন পাল ৫৫,১৩৭, তৃণমূলের রমাপ্রসাদ তেওয়ারি ৩৪,০৮৬। খড়্গপুর কংগ্রেসে বড়সড় ভাঙন ধরায় তৃণমূল লাভবান হয়েছে। কিন্তু বিজেপি’র যে পাঁচজন কাউন্সিলর দলত্যাগ করেছিলেন তাঁরা চাপে পড়ে করেছিলেন বলে বিস্তর অভিযোগ। কারণ, পুরসভা ভোটের পর হয়েছিল বিধানসভা নির্বাচন। মাত্র ২ জন কাউন্সিলর খাতায়কলমে ছিল সেই সময় বিজেপি’র। তা সত্ত্বেও দিলীপবাবু জয়ী হয়েছিলেন। আসলে কাউন্সিলররা চাপের মুখে পড়ে তৃণমূলে গেলেও ভোট কিন্তু বিজেপি’র পক্ষেই ছিল। তারই ফলশ্রুতিতে তৃণমূল তৃতীয় স্থানে চলে যায়। প্রথম স্থানে উঠে আসে বিজেপি। বর্তমান পরিস্থিতির উপর দাঁড়িয়ে বিজেপি’র দাবি, তারা খড়্গপুর সদর থেকে ভালো ব্যবধানে জয়ী হবে। যদিও অঙ্ক কিন্তু রয়েছে তৃণমূলের সাথে। কারণ, রাজনৈতিক মানচিত্র খড়্গপুরে অনেক বদলে গিয়েছে। কেশিয়াড়িতেও বিজেপি’র দাপট বেড়েছে। মেদিনীপুর শহরেও বিজেপি’র দাপট বেড়েছে। এরপর তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে চোরাস্রোত বইছে। এই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকেই কাজে লাগাতে চাইছে দিলীপ ঘোষ-মুকুল রায়রা। যদিও অঙ্কের হিসেবে অনেক এগিয়ে তৃণমূল। কিন্তু নেতারা আশ্বস্ত হতে পারছেন না। কারণ, মানসবাবু কংগ্রেস থেকে তৃণমূলে এসে দ্রুত দলের শীর্ষ নেতৃত্বের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছেন। যার ফলে সবং বিধানসভায় মানসবাবুর স্ত্রী গীতা ভুঁইয়া প্রার্থী হয়ে বিধায়ক হয়েছেন। মানসবাবু নিজে রাজ্যসভায় গিয়েছেন। সেই তিনি ফের কেন লোকসভায় প্রার্থী, এই নিয়েও গুঞ্জন কোনও অংশে কম নয়। মানসবাবুর এত প্রাপ্তি তৃণমূলের নিচুতলায় জল্পনার সৃষ্টি করেছে। তবে, মানসবাবু অনেক বড় মাপের রাজনীতিবিদ। কাকে কিভাবে ম্যানেজ করতে হয়, তা তাঁর অজানা নয়। ফলে বিজেপি’র উত্থান ঘটলেও মানসবাবু লড়ছেন নিজের মতো করে। মোদি-অমিত শাহরা মেদিনীপুরে প্রচারে আসবেন, এমনটাই জানা যাচ্ছে। তবে, মেদিনীপুরের মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর আস্থা রেখে চলেন। ফলে মানসবাবু এখনও অনেক এগিয়ে, এমনটা বলা যেতেই পারে।